ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৩ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভারতকে নিয়ে ডুবল পাকিস্তান 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

অবিশ্বাস্য! স্রেফ অবিশ্বাস্য! না, এ শব্দ দিয়েও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। সেঞ্চুরিয়নে গতকাল শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) তৃতীয় দিনের শেষ বিকাল থেকে আজ রোববার (২৯ ডিসেম্বর) চতুর্থ দিনে দুই সেশনে যা ঘটেছে, তাকে টেস্ট ক্রিকেটের অনির্বচনীয় সৌন্দর্য ছাড়া আর কী বলা যায়!

হ্যাঁ, আর বলা যায় – অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে পাকিস্তানের চিরকালীন অননুমেয়তার প্রমাণ!

সব বলা যাবে, আগে ফলটা বলে নেওয়া যাক। চূড়ান্ত নাটক দেখা দিনের দ্বিতীয় সেশনে আজ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল শেষ বিকেল থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো পাকিস্তানের জয়ই যেখানে লাঞ্চের সময় মনে হচ্ছিল একমাত্র সম্ভাব্য ফল, সে ম্যাচই দ্বিতীয় সেশনে ২৫.৪ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিতিয়ে দিল নবম উইকেটে মার্কো ইয়ানসেন আর কাগিসো রাবাদার জুটি।

দক্ষিণ আফ্রিকার এ জয়ে অসামান্য এক প্রাপ্তি হয়েছে, প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা। পাকিস্তানের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের সঙ্গে কোনো হিসেব-নিকেশ ছিল না, তবে পাকিস্তানের দিকে চাতকের মতো তাকিয়ে ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশি ভারত। অস্ট্রেলিয়ায় নিজেদের সিরিজে জেতার পাশাপাশি এ সিরিজে পাকিস্তানের জয়ই যে ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার সবচেয়ে সহজ সিঁড়ি ছিল! ভারত নিজেরা কী করতে পারবে তা দেখার বিষয়, তবে পাকিস্তান আজ শেষ বেলায় তীরে এসেও নিজেরা ডোবার পথে ভারতের নৌকায়ও যেন ফুটো করে দিয়েছে!  

গতকাল তৃতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যখন ১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হলো পাকিস্তান, মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা সহজেই জিতে উঠে যাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। কিন্তু গতকাল দিন শেষের এক ঘণ্টায় পাকিস্তান সব হিসাব পাল্টে দিল ২০ রান না তুলতেই দক্ষিণ আফ্রিকার তিন উইকেট তুলে নিয়ে।

তখন কে জানত, সেটি ছিল হার্টবিটের মতো উত্থান-পতন দেখা দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ‘স্পাইক!’ ৩ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে গতকাল দিন শেষ করা দক্ষিণ আফ্রিকা আজ চতুর্থ দিনের শুরুতে এগিয়ে ছিল বাভুমা আর মার্করামের সৌজন্যে। চতুর্থ উইকেটে দুজন ৪৩ রানের জুটিটা যখন গড়ছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এমন বিপদে পড়তে যাচ্ছে বলে তখন কে-ইবা ধারণা করতে পেরেছিল!

দলকে ৬২ রানে রেখে আব্বাসের নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড হয়ে মার্করাম (৩৭ রান) আউট হওয়ার পরও তো তা মনে হয়নি। হয়নি ক্রিজে বাভুমা ছিলেন বলেই! ডেভিড বেডিংহ্যামের (১৪) সঙ্গে মিলে দলকে ১০০ পার করানোর পথেই ছিলেন তিনি। লক্ষ্য যখন ১৪৮, সে পথে ১০০ পার হয়ে যাওয়া মানে তো বাড়ির কাছে চলেই আসা!

কিন্তু লাঞ্চের আগে হঠাৎ যেন ক্ষুধা চাগিয়ে উঠল পাকিস্তানের বোলারদের। বিশেষ করে আব্বাসের। প্রায় তিন বছর পর এই প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছেন, কিন্তু আব্বাসকে দেখে তা কে বলবে! দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ উইকেটের ৬টিই তার!

আজ প্রথম সেশনে পুরোটা সময় এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে গেছেন তিনি – প্রসঙ্গত, তিনি একজন পেসার! গতকালই তিন উইকেটের দুটি নিয়েছিলেন, আজ সকালে মার্করামকেও ফিরিয়েছেন, কিন্তু আব্বাসের ক্ষুধা যে মেটেনি, সেটা বোঝালেন লাঞ্চের ঠিক আগে।

শুরুটা ৩০তম ওভারে বাভুমার বিদায় দিয়ে, যদিও সে উইকেটে আব্বাসের বোলিংয়ের চেয়েও কৃতিত্ব বেশি বাভুমা অদ্ভুতুড়ে শটের। আর আম্পায়ারের। ‘দ্বিধাবিভক্ত’ শট যাকে বলে, তা-ই যেন খেলতে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। উঠতে থাকা বলে একটু এগিয়ে মিড অফের ওপর খেলতে চেয়েছিলেন, কেন ওই সময়ে ওই শট খেলতে গেলেন, তা-ই এক প্রশ্ন। বল গেল উইকেটের পেছনে। চমকের ওখানেই শেষ নয়! রিপ্লেতে দেখা গেল, বল ব্যাটের অংশ পার করার সময়ে আল্ট্রাএজে কোনো স্পাইক নেই, অর্থাৎ বল ব্যাটেই লাগেনি। অথচ রিয়েল টাইমে বলটা ব্যাট পার করার সময়ে একটা আওয়াজ হয়েছে, হয়তো সে কারণেই বাভুমা রিভিউ নেননি। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা ড্রেসিংরুমকে বিস্ময়ে বিমুঢ় করে বাভুমা ফিরে গেলেন ৪০ রান করে, দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন ৫ উইকেটে ৯৫।

কিন্তু হাতে যখন উইকেট আরও পাঁচটি, রান যখন আর ৫২টি দরকার, কে ভেবেছিল যে এখান থেকেই ম্যাচ এমন ঘুরে যাবে! অথচ সেই ম্যাচই ঘুরে গেল মাত্র ওভার পাঁচেকে। ৩০তম ওভারে বাভুমা ফিরলেন, লাঞ্চ হলো ৩৪তম ওভার শেষে। লাঞ্চের সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দর্শক চোখ কচলে আবিষ্কার করলেন, তাদের দলের রান ৯৯/৮! বাভুমার পরের ওভারেই ফিরলেন ভেরেইনা, তার পরের ওভারে পরপর দুই বলে বেডিংহ্যামের পর প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানকে বশ মানানো করবিন বশকে ফেরালেন আব্বাস!

লাঞ্চে পাকিস্তানই গেল হাত কচলাতে কচলাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখনো দরকার ৪৯, পাকিস্তানের উইকেট দরকার দুটি। প্রথাগত কোনো ব্যাটসম্যান আর বাকি নেই দক্ষিণ আফ্রিকার!

কিন্তু ওই যে, ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, আর পাকিস্তান তার চেয়েও বেশি অননুমেয়। লাঞ্চের পর পাকিস্তানের বোলিংয়ে আর ধার থাকল না, এমনকি প্রথম সেশনে টানা পুরো সেশন বোলিংয়ের ধকলেই কি না, আব্বাসের বলেও জাদু ফুরিয়ে গেল। আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে জেতালেন কে? ক্রিজে কিছুটা ব্যাটিং করতে পারা মার্কো ইয়ানসেন ছিলেন বটে, হয়তো নবম উইকেটে তাঁর সঙ্গী কাগিসো রাবাদা কিছুটা ব্যাট চালাতে পারেন বলেই রাবাদাকে আক্রমণের দায়িত্ব দিয়ে ইয়ানসেন গেলেন অ্যাঙ্করের রোলে। হিসেব সহজ, রাবাদা যা রান করতে পারেন করুন, রাবাদা আউট হয়ে গেলে শেষ উইকেট জুটিতে ইয়ানসেন একাই খেলার চেষ্টা করতেন।

কিন্তু রাবাদা দায়িত্বটা পেয়ে এমনই আগ্রাসন শুরু করলেন যে, পাকিস্তানকে ডুবিয়ে নিজেদের ফাইনালে উঠিয়েই ছাড়লেন। শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে ৫ চারে ৩১ রানে অপরাজিত থাকলেন রাবাদা, তাঁর পঞ্চম চারই হয়ে থেকেছে উইনিং শট। আর অন্য প্রান্তে অ্যাঙ্কর ইয়ানসেন ২৪ বলে ৩ চারে ১৬ রানে অপরাজিত থেকে যোগ দিলেন বিজয়ের উৎসবে।

এসএস//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি